1. admin@anusondhantv.com : admin :
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

অমর একুশে আজ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৩৬৯ Time View
অনুসন্ধান টিভি ডেস্ক ॥
সইমু না আর সইমু না অন্য কথা কইমু না/যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান…। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে সত্যিই জান দিতে হয়েছিল বঙাালিকে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ সেই একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। আজ ‘মাথা নত না করা’র অমর একুশে। ১৯৫২ সালের এই দিনে শুধু ঢাকায় নয়, বাংলার প্রতি ঘরে বোনা হয়েছিল একুশের রক্তবীজ। বায়ান্নর সে বীজ থেকেই একাত্তরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। ভাষাকেন্দ্রিক একটি জাতিরাষ্ট্র পায় বাঙালি। ২১ ফেব্রুয়ারি তাই আলাদা তাৎপর্যের। সুমহান মর্যাদার। প্রতি বছরের মতো আজো রাষ্ট্রীয় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান শহীদ দিবস পালন করা হবে। একই সময় বাঙালির ভাষা-চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পৃথিবীর নানা দেশ ও বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ পালন করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অমর একুশের দিনে আজ দেশের সর্বত্রই বাজবে সেই বেদনা সংগীত : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে শোক। ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে ওড়ানো হবে কালো পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ৭০ বছর অতিক্রান্ত হলেও, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আজো অনেকে উদাসীন। আনুষ্ঠানিকতায় ঝোঁক আছে বটে। গভীর চর্চার অভাব। সেই সুযোগে একুশের চেতনা বিরোধী অপশক্তি সব অর্জন গিলে খাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যখন ভুল রাজনীতির লোকেরা অনবরত হুঙ্কার দিয়ে চলেছে, যখন প্রগতির নামেও বিভ্রান্ত করার পাঁয়তারা তখন আরও বেশি সতর্ক হওয়ার, সজাগ থাকার বার্তা দিতে এসেছে ২১ ফেব্রুয়ারি। একইভাবে যখন আত্মকেন্দ্রিকতায় আপোসে দিন কেটে যায়, যখন চাটুকারিতাই সাফল্যের সোপান হয়ে ধরা দেয়, শিকড় আঁকড়ে থাকা মানুষ যখন অবহেলার শিকার হয়, সুবিধাবাদী ধারাটিই যখন মূল ধারা হয়ে সামনে আসে তখন অমর একুশ আর শুধু উদ্যাপনের হয়ে থাকে না। উপলব্ধিতে নেওয়া জরুরি হয়ে যায়। আজ সেই গভীর উপলব্ধির দিন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে স্ফূরণ ঘটেছিল তা-ই পরবর্তীতে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রেরণা জোগায়। নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে আসে ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ। নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সংগ্রাম হিসেবেও এর রয়েছে আলাদা তাৎপর্য। এদিন পাকিস্তানিদের সবেচেয়ে ভালো চিনতে পেরেছিল বাঙালি। তাদের সঙ্গে যে থাকা যাবে নাÑ তা বুঝে গিয়েছিল। তারও আগে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়। জন্ম নেয় পৃথক দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুই অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বাঞ্চলের মানুষ ছিল মূলত বাঙালি। মাতৃভাষা ছিল বাংলা। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত ছিল সিন্ধী, পশ্তু, বেলুচ, উর্দুসহ আরও কয়েকটি ভাষা। এ অবস্থায় পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগ নেতৃত্ব সমগ্র পাকিস্তানের আনুমানিক পাঁচ শতাংশের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু করে। অথচ তারও অনেক আগে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালির অনুভূতি কত তীব্র ছিল তা জানিয়ে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেন : ‘যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই অনুভূতি বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এ অঞ্চলের মানুষকে পেছনে ফেলে রাখার ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রথমে ভাষার ওপর আঘাত হানে তারা। মায়ের ভাষা বাংলার মুখ থেকে কেড়ে নিতে অপতৎপরতা শুরু করে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সকল অনুভূতি তুচ্ছ করে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা আসতে থাকে পাকিস্তানের শীর্ষ মহল থেকে। এমন ষড়যন্ত্রে হতবাক হয়ে যায় বাংলার মানুষ। বাঙালির সে সময়ের মনোজগত তুলে ধরে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘মাগো, ওরা বলে/সবার কথা কেড়ে নেবে।/তোমার কোলে শুয়ে/গল্প শুনতে দেবে না।/বলো, মা,/তাই কি হয়?’ এর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে স্থির থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। গণচেতনাকে স্তব্ধ করার ভয়ঙ্কর পথ বেছে নেয়। এ অবস্থায় বাঙালির সামনে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প ছিল না। ১৯৪৮ সাল এবং ১৯৫২ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তারই প্রমাণ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুরুয়ারি পাকিস্তানিদের গোয়ার্তুমির চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ ঘটে। এদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। কিন্তু সকল ভয় জয় করে ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। ভাষার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবুল, বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। গীতিকবির ভাষায়: ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলিরে বাঙালি/তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।’ মায়ের ভাষার জন্য ঢাকার রাস্তায় বিরল রক্তশ্রোত বয়ে গিয়েছিল সেদিন। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাজপথে নেমে আসে। স্বজন হারানোর স্মৃতি অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি স্মৃতির মিনার গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ। তবে তাতেও কোনো কাজ হয় না। ‘কোথায় বরকত কোথায় সালাম/সারা বাংলা কাঁদিয়া মরে।/যে রক্তের বানে ইতিাস হলো লাল/যে মৃত্যুর গানে জীবন জাগে বিশাল/সে জাগে ঘরে ঘরে।’ বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় ষড়যন্ত্রকারীরা। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে অমর একুশে। প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ॥ একুশের প্রথম প্রহর থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়েছে। করোনাকালীন বাস্তবতায় গত দুই বছর সশরীরে শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকতে পারেননি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার করোনামুক্ত পরিবেশে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে জাতির পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও শহীদ বেদিতে ফুল দেয়া হয়। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষেরও ঢল নামে এদিন। শহীদ মিনার ঘিরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা য়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নীলক্ষেত ও ইডেন কলেজে গিয়ে ঠেকে অপেক্ষারতদের সারি। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আসা মানুষের হাতে ছিল তাজা ফুল। অনেকে সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। খুব সুন্দর ছিল এ দৃশ্যটা। আজ সকাল বেলায়ও বহু মানুষ প্রভাতফেরিতে অংশ নেবেন। ‘প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি/আমায় নেবে সঙ্গে,/বাংলা আমার বচন, আমি/জন্মেছি এই বঙ্গে।’ বঙ্গ-সন্তানরা ঢাকার পাশাপাশি গোটা দেশের প্রতি প্রান্তে, বিশেষ করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে থাকা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে। রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন ॥ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আজ ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ছায়ানট, উদীচীসহ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও একুশের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে আজ। সমস্ত আয়োজনের মধ্য দিয়ে একুশের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার শপথ নেবে বাঙালি। কবির ভাষায় : ‘স্বাধীন এই বাংলা আমার/কোটি প্রাণ শহীদ মিনার/নেবই নেব, নেবই নেব/নেবই নেব আমরা মনের মতো এই দেশ গড়ে…।’ দেশ গড়ার এই শপথে নতুন করে আজ জেগে উঠুক বাঙালি। বলার অপেক্ষা রাখে না, তবেই সার্থক হবে একুশের  আনুষ্ঠানিকতা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

© All rights reserved © 2020 TV2Channel
Theme By Bongshai IT