নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশালের মুলাদী উপজেলা বিএনপির প্রত্যাশিত নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে শুক্রবার রাতে। নির্যাতিত ত্যাগি এবং কর্মীবান্ধব নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটিতে অধ্যাপক মো. শরিয়তউল্লাহকে আহ্বায়ক এবং কাজী কামাল হোসেনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। ৬১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি গঠনের পর নেতৃবৃন্দকে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্তসময় পার করছে ইউনিয়নপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিপরিতে উপজেলার নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যসচিব কাজী কামাল হোসেন সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করছেন অনেকটা জোরেসোরে। বলা চলে নেতৃত্ব পাওয়ার পর দিন অর্থাৎ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কাজী কামাল সরব হন রাজনীতির মাঠে, বিএনপির নির্ধারিত কর্মসূচি পদযাত্রায় বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থন নিয়ে শোডাউন দিয়ে দেখিয়েছেন তার রাজনৈতিক কারিশমা। একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা কাজী কামালকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে চেয়ে দলের বড় একটি অংশ ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং তারা কাজী কামালের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। প্রত্যাশিত নেতৃত্ব পেয়ে এই নেতা শনিবার সকালে এলাকায় গিয়ে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্ববায়ক আবিদুর রহমান হুমায়নকে সাথে রেখে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পদযাত্রায় অংশ নেন এবং স্বল্পসময়ের ব্যবধানে ইউনিয়নপর্যায়ের বিপুল নেতাকর্মী একত্রিত করে সকলের দৃষ্টি কাড়েন। সঙ্গত কারণে মুলাদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন কাজী কামাল। স্থানীয় সূত্র জানায়, কাজী কামাল মুলাদীর বিএনপির একটি বড় অংশকে আগলে রাখেন এবং দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব সারিতে আসার সংকল্প নিয়ে মাঠে কাজ করছিলেন। এবং দলের ওই অংশটি চাইছিল তাকে নেতা হিসেবে দেখতে, বিশেষ করে তাদের দাবি ছিল, কাজী কামালকে উপজেলা বিএনপিতে সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের মর্যাদা দেওয়া হয়। তৃণমূলের এমন প্রত্যাশার প্রতিফল ঘটে শুক্রবার রাতে। তাদের নেতা কাজী কামালকে সভাপতি না করলেও উপজেলা বিএনপির কমিটিতে তাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এই কমিটি অনুমোদন করেন বরিশাল (উত্তর) জেলা বিএনপি আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব মিজানুর রহমান মুকুল। এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অধ্যাপক মো. শরিয়তউল্লাহকে। সূত্রটি আরও জানায়, এর আগে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে আব্দুস সত্তার খান এবং আসাদ মাহামুদ থাকলেও তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ এক যুগ আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারছিল না। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি দায়সাড়া ভাবে পালনে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম। ফলে তরুণ নেতৃত্ব কাজী কামালকে ঘিরে দলের বড় ওই অংশটি সরব ছিল রাজনীতির মাঠে।ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক কর্মী-সমর্থক জানান, কাজী কামাল ত্যাগের প্রতিদান পেয়েছেন, তাকে স্থানীয় রাজনীতির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে জেলা উত্তরের নেতারা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার দরুণ এই নেতাকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়েছে বিএনপি। সেই কারিশমা তিনি নেতৃত্ব পাওয়ার একদিনের মাথায়ই দেখিয়েছেন কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে। সূত্রগুলো জানায়, শুধু কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালনেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে আসা প্রতিটি নির্দেশনা কী ভাবে পালন করা যায় এবং সেখানে কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণ ও তাদের মনবল চাঙা রাখতে কী কী করণীয় সেম্পর্কেও কাজ শুরু করে দিয়েছেন কাজী কামাল। শনিবার সকালে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন শেষে স্থানীয় এবং ইউনিয়নপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে গত দুদিনে তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেন, আহ্বান রাখেন দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবব্ধ হওয়ার। নবগঠিত কমিটিতে স্থান পাওয়া এই নেতা জানান, কাজী কামাল নেতৃত্ব পাওয়ার পর নিজেকে যে ভাবে মেলে ধরছেন, এতে লেজেগোবরে অবস্থা থেকে উপজেলা বিএনপি সঠিক পথ খুঁজে পাবে এবং আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে পাবে নতুন দিশা। অবশ্য এর নেপথ্যে বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরে ওই নেতা বলছেন, কাজী কামাল ইউনিয়ন, কলেজ, উপজেলা এবং জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব থেকে উঠে এসেছেন। হয়েছেন নির্যাতন এবং নিপিড়নের শিকার। এমনকি ঘরের নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার গ্লানি নিয়ে বইতে হয়েছে তাকে। বলা চলে অনেকটা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছেন তিনি এবং সর্বশেষ পেলেন প্রত্যাশিত নেতৃত্ব। যদিও নেতৃত্ব পাওয়ার পর পিছনের সকল তিক্ততার কথা ভুলে গেছেন কাজী কামাল। এই নেতা বলছেন, বিগত সময়ের কথা মনে করে কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। জেলার নেতারা দলের এই দুসময়ে তাকে যোগ্য মনে করে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সঠিক ভাবে পালন করবেন। এক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, সকলের সমন্বয়ে স্থানীয় বিএনপিকে গতিশীল করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।পর্যবেক্ষণ মহল বলছে, কাজী কামাল নেতৃত্ব পাওয়ার পরে নিজেকে যে ভাবে মেলে ধরার কৌশল নিয়েছেন এবং বিভাজিত কর্মী-সমর্থকদের একত্রিত করতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তা ইতিবাচক বলা চলে। তার এই উদ্যাগ সম্পূর্ণরুপে বাস্তবায়ন হলে বিএনপি মার্চে সরকারবিরোধী যে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা এখান থেকে অনেকাংশে বেগবান করে তুলবে।’
Leave a Reply