নিজস্ব প্রতিবেদক
বাকেরগঞ্জে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ও মসজিদ মন্দির হাট-বাজারে চুরির হিড়িক পড়েছে। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, মোবাইল সেট,অটো রিক্সা, গরুসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হচ্ছে। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে শুধু রাতেই নয় দিনের আলোতেও চুরির হিড়িক পরেছে। ভুক্তভোগীরা পুলিশের দ্বারস্থ হলেও হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া চুরি প্রশাসন সামাল দিতে পারছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯.১৫ মিনিটে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ডিজিটাল ক্লিনিক সংলগ্ন আলাউদ্দিন খানের মোবাইলের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে নগদ টাকা সহ মোবাইল সেট রিসার্চ কার্ড সহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু পৌর এলাকায় মসজিদ মন্দির বাসা বাড়িসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের চুরির ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ডালিম হাওলাদারের বাড়ি মসজিদে গভীর রাতে গেটের তালা ভেঙে চোর ও চুরির দৃশ্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় রেকর্ড থাকলেও এই ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় লিখিত দুইটি অভিযোগ দিলেও পুলিশের তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, জিন্স প্যান্ট, ও জ্যাকেট পরা দুই চোর মসজিদের পাশে থাকা গাছ কাটার শমিল থেকে লোহার রড হাতে নিয়ে মসজিদের ভিতরে ঢুকেছে। পরে তারা চুরি করে। এছাড়াও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গভির রাতে চৌমাথা জামেমসজিদের দান বাক্স ভেঙ্গে চুরির ঘটনা ঘটরছে। অপরদিকে, বাকেরগঞ্জে উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নে বামনীকাঠী গ্রামে সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের গ্রিল কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে মন্দিরের অভ্যন্তরে এ চুরি সংঘটিত হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি মানিক লাল দাস জানান অজ্ঞাত চোরেরা মঙ্গলবার গভীর রাতের কোনো একসময়ে মন্দিরের পিছনের লোহার দরজার তালার আংটা কেটে, মন্দিরে ঢুকে রাধাকৃষ্ণ মূর্তির শরীর থেকে প্রায় ৩ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার, ও ২ভরি রৌপ্য অলংকার নগদ অর্থ ১২০০০০টাকা নিয়ে যায় । এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে মন্দির কমিটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও হাটবাজার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কারবারিদের রমরমা বানিজ্য, গাড়ী ও গরু চুরি এবং স্প্রে পার্টির তৎপর বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে জীবনযাপন করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে ফলাঘর গ্রামে ঘটে যাওয়া তিনটি আলোচিত ঘটনার পরে দুই মাস পার হলেও এখনো চিহ্নিত হয়নি কোনো আসামী, রয়ে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা। গত ২৬ জানুয়ারি রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারে বৃহস্পতিবার সপ্তাহিক হাটের মধ্যে কালিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মন্টু হাওলাদার বেকারির মালিকের স্ত্রীকে স্প্রে দিয়ে অচেতন করে হাত পা বেঁধে অভিনব স্টাইলে বাসায় ডাকাতি করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালীন সময় মাইক্রো বাসে কালিগঞ্জ বাজারে এসে বিকাশের দোকানে ডাকাতি করা হয়। এছাড়াও গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ফলাঘর গ্রামের কুয়েত প্রবাসি নজরুল জোমাদ্দারের বাস ভবনে মা মেয়েসহ পরিবারের সবাইকে অচেতন করে রাতে ডাকাতির শেষে হাত পাঁ বাঁধা অবস্থায় ফ্লোরে পানির উপর ফেলে রেখে যায় ডাকাত বাহিনী। ফিল্ম স্টাইলে একের পর এক চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে নিয়ামতি বাজারে মসজিদে ভিতরে প্রবেশ করে তাবলীগ জামাতের মুসল্লিদের স্প্রে দিয়ে অচেতন করে মোবাইল মানিব্যাগ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায় শঙ্খবদ্ধ চোরচক্র। বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় দিন দিন বেড়ে চলছে চোরাই মাল ক্রয়কৃত ভাঙ্গারির দোকান ও চোরাই অটো রিক্সা ক্রয় বিক্রয়ের গ্যারেজ। চুরি ডাকাতি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও আসামি গ্রেফতারের তেমন কোনও পদক্ষেপ দেখা যায় না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। পৌর এলাকা অধিকাংশ বাসিন্দারা জানান, আমরা বাসায় ভয়ে রাত কাটাই। কখন কোন ঘটনা ঘটে যায়। প্রতিদিন চুরি ডাকাতির ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক। আশা করি ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ দ্রুত চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী দিনে আরো অবনতি ঘটবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে অপরাধীচক্র আরো সক্রিয় হচ্ছে।এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন স্থানে চুরি ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, মামলা হলে ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply